আইপিএলে দর্শকরা দেখল রেকর্ড আর রেকর্ড।দুই দল মিলে এদিন রান করেছে ৫২৩। ম্যাচ জিতল সানরাইজার্স হায়দরাবাদ। আগের ম্যাচেও দুইশ রান প্রায় টপকেই গিয়েছিল হায়দরাবাদ। যদিও নিজেদের ভুলে ৪ রানের দূরত্বে তাদের হতাশা নিয়ে ফিরতে হয়েছিল। প্যাট কামিন্সের দলটি এবার প্রথমে ব্যাটিংয়ে নেমে রীতিমতো তাণ্ডব চালাচ্ছে। দ্রুততম ফিফটিতে একের পর এক ব্যাটসম্যান নিজেদের ছাড়িয়ে গেছেন। আর নির্ধারিত ২০ ওভার শেষে হায়দরাবাদ গড়ে ফেলেছে আইপিএল ইতিহাসের সর্বোচ্চ দলীয় রানের রেকর্ড। ৩ উইকেট হারিয়ে মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সকে তারা ২৭৮ রানের লক্ষ্য দিয়েছে।
হায়দারাবাদের রাজিব গান্ধী স্টেডিয়ামে ম্যাচটি অনুষ্ঠিত হলেও মুম্বাইয়ের সাবেক অধিনায়ক রোহিত শর্মার জন্য ছিল বিশেষ দিন। কারণ এদিন (বুধবার) রোহিত শর্মা নিজের ২০০তম আইপিএল ম্যাচ খেলতে নেমেছেন। তবে তার বিশেষ মাইলফলকের ম্যাচটিকে বলতে গেলে প্রায় ছিনিয়েই নিয়েছে সানরাইজার্স হায়দরাবাদ। এর আগে ম্যাচের শুরুতে মুম্বাইয়ের আরেক কিংবদন্তি শচীন টেন্ডুলকার দলটির ইতিহাসে প্রথম দুইশ ম্যাচ খেলতে নামা রোহিতের হাতে একটি স্মারক জার্সি তুলে দেন।
টস হেরে আগে ব্যাট করতে নেমে এদিন শুরু থেকেই বিধ্বংসী মেজাজে ছিলেন হায়দরাবাদ ব্যাটসম্যানরা। প্রথমে ওপেনার ট্রাভিস হেড মাত্র ১৮ বলে ব্যক্তিগত অর্ধশতক পূর্ণ করেন। যা ছিল হায়দরাবাদের হয়ে আইপিএলের সবচেয়ে দ্রুততম কারও ফিফটি। অথচ নিজেদের প্রথম ম্যাচের একাদশেও ছিলেন হেড। পরবর্তীতে তার সেই রেকর্ড বেশিক্ষণ টিকেনি। অজি ব্যাটারকে দারুণ সঙ্গ দেওয়া ভারতীয় তরুণ অভিষেক শর্মা যে আরও দুই বল কম খেলে সেই রেকর্ড ভেঙে দেন। তাদের পালা শেষ হলে, ক্রিজে এসে ঝড় তোলেন হেইনরিখ ক্লাসেন। তবে দ্রুততম ফিফটির রেকর্ড গড়তে না পারলেও, তার ব্যাটেই আসে দলটির হয়ে সর্বোচ্চ ৮০ রানের ইনিংস।
এর আগে আইপিএল ইতিহাসের সর্বোচ্চ দলীয় সংগ্রহ ছিল ২৬৩ রানের। ২০১৩ সালে পুনে ওয়ারিয়র্সের বিপক্ষে করা রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর সেই রেকর্ড ১১ বছর টিকেছিল। সেটি আজ ভেঙে দিল হায়দরাবাদ। একইসঙ্গে যেকোনো টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্টের ইতিহাসেও সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড গড়ল তারা। এদিকে, নিজেদের ইতিহাসে দলটির সর্বোচ্চ সংগ্রহ ছিল ২৩১ রান। মুম্বাইয়ের বিপক্ষে আজ হায়দরাবাদ নিজেদেরকেই নিজেরা ছাড়িয়ে গেছে অনেকদূর। এমন রেকর্ড গড়ার পথে আইপিএলের চতুর্থ উইকেটে সর্বোচ্চ জুটিও গড়েছে দলটি। হেইনরিখ ক্লাসেন ও এইডেন মার্করাম জুটি এনে দেন ১১৬ রান। এছাড়া এদিন হায়দরাবাদের চার ব্যাটার ৪৫ রানের বেশি রান করেছেন। যদিও এমন ঘটনা এর আগে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে আরও চারবার ঘটেছে।
এদিন শুরু থেকে তাণ্ডব বইয়ে দেওয়া হায়দরাবাদ প্রথম সাত ওভারেই দলীয় শতরানের গণ্ডি পার করে ফেলে। এর আগে তাদের প্রথম উইকেটের পতন হয় ৪৫ রানে। মায়াঙ্ক আগারওয়ালের বিদায়ের পরই শুরু হয় আসল ঝড়। দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে হেড ও অভিষেক মিলে গড়েন ৬৮ রানের জুটি। ৬২ রান করা হেডের বিদায়ে সেই জুটি ভাঙে, এমন ইনিংস খেলতে মাত্র ২৪ বলে অজি ক্রিকেটার ৯টি চার ও ৩টি ছয় হাঁকিয়েছেন। এরপর ২৩ বলে ৬৩ রান করে ফেরেন অভিষেক। যেখানে ৩টি চার ও ৭টি ছয়ের মার।
১৬১ রানে তৃতীয় উইকেট হারানোর পর আর হায়দরাবাদকে পেছনে তাকাতে দেননি মার্করাম-ক্লাসেন জুটি। ক্লাসেন ব্যক্তিগত ফিফটি পেয়েছেন ২৪ বলে। পরবর্তী ১০ বলে তিনি আরও ২৯ রান নিজের নামের পাশে যোগ করেন। সবমিলিয়ে মাত্র ৩৪ বলে ৪টি চার ও ৭টি ছয়ে এই দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটার অপরাজিত থাকেন ৮০ রানে। এছাড়া আরেক অপরাজিত ব্যাটার মার্করাম ২৮ বলে ৪২ রান করেন। দলীয়ভাবে হায়দরাবাদ আজ আইপিএলের দ্বিতীয় দ্রুততম দুইশ রান তোলে। যাতে তাদের লেগেছে ১৪.৪ ওভার। এর আগে ২০১৬ আসরে বেঙ্গালুরু ১৪.১ ওভারে দলীয় ২০০ পেরিয়েছিল।
হায়দরাবাদের এমন ঝড় তোলার দিনে স্বাভাবিকভাবেই দিশেহারা ছিলেন মুম্বাইয়ের বোলাররা। আইপিএল ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বকনিষ্ঠ হিসেবে অভিষেক হওয়া কেনা মাফাখা ৪ ওভারে দেন ৬৬ রান। যা আইপিএলে অভিষিক্ত বোলার হিসেবে সবচেয়ে বেশি রান দেওয়ার রেকর্ড। সবমিলিয়ে টুর্নামেন্টের ষষ্ঠ খরুচে বোলার মাফাখা। পাশাপাশি তিনি ছিলেন উইকেটশূন্য। মুম্বাইয়ের হয়ে এদিন একটি করে উইকেট নেন হার্দিক পান্ডিয়া, জেরাল্ড কোয়েটজে ও পিযূশ চাওলা। তবে জাসপ্রিত বুমরাহ বাদে তাদের সবাই দশের বেশি গড়ে রান দিয়েছেন।