দেশ থেকে অপরাধ কমিয়ে আনতে সরকার যদি আন্তরিক হয় তবে অপরাধের উৎপত্তিস্থল ধ্বংস করে দিতে হবে। অপরাধের উৎপত্তিস্থলের অন্যতম কেন্দ্র হলো দেশের পতিতালয়গুলো। তার মধ্যে দৌলতদিয়া পতিতালয় দীর্ঘদিন যাবত অপরাধের কেন্দ্রবিন্দু। খুন, মাদক ব্যবসা, রাজনৈতিক দুর্বৃত্তদের অবৈধ অর্থ যোগান এবং দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ধরে এনে অপ্রাপ্ত বয়স্ক মেয়েদেরকে জোর করে কেনা বেঁচার তীর্থস্থান হলো এইসব পতিতালয়।
কাদের বলেছিলেন, “পালাবো না! এখন তার খোঁজ নেই”
এগুলোর প্রভাব আমাদের সমাজে কিভাবে পড়ছে এবং সমাজকে নষ্ট করছে তা পরে একদিন বিস্তারিত লিখবো। ১৯৯১ সালে রাজবাড়ী জেলা প্রশাসকের অফিসকক্ষে অনুষ্ঠিত জেলা উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির সভায় আমি প্রস্তাব করেছিলাম, জোরপূর্বক পতিতালয় উচ্ছেদ না করে পতিতালয়ের চতুর্দিকে একটা কাঁটাতার সম্বলিত সুউচ্চ দেয়াল দিয়ে ঘিরে দিতে হবে। দিনরাত চব্বিশ ঘন্টা এমনভাবে সেখানে পাহারা দিতে হবে যাতে নুতন করে কোন মেয়েকে সেখানে পতিতাবৃত্তি করতে কোন দালাল বা বাড়ীওয়ালা আনতে না পারে। এভাবে দশ বছরের একটা প্রকল্প হাতে নিতে হবে। আর এসব করার আগে পতিতালয়ের ভেতর যে সব যৌনকর্মী ইতিমধ্যেই বাস করছে তাদের ছবিসহ তালিকা বা রেজিষ্ট্রেশন করতে হবে।
এভাবে বছর দশেক চলার পর এবং নুতন যৌনকর্মী প্রবেশে কঠোর নিষেধাজ্ঞা জারী থাকলে নিবন্ধিত যৌনকর্মীরা বয়স্ক হয়ে যাবে এবং তাদের পতিতাবৃত্তি ব্যবসা আর চালিয়ে নেয়া সম্ভব হবে না। তখন তাদের অনেকে দৌলতদিয়া থেকে চলে যাবে এবং অবশিষ্ট যারা থাকবেন তাদেরকে গোয়ালন্দ উপজেলা পরিষদের সমাজসেবা বিভাগ নানা সরকারী প্রকল্পে পুনর্বাসন করবে। এই প্রকল্প বাস্তবায়নে তৎকালীন রাজবাড়ী পৌরসভার চেয়ারম্যান আলী নেওয়াজ খৈয়ামকে সভাপতি করে এবং সাংবাদিক, মসজিদের ইমাম, সমাজ সেবক, শিক্ষক এবং স্হানীয় সৎ কিন্তু প্রভাবশালী লোকদের সমন্বয়ে একটি কমিটি করার প্রস্তাব দিয়েছিলাম এবং সেটা গৃহীত হয়েছিল। সেই সভায় সভাপতিত্ব করেন তৎকালীন জেলা প্রশাসক জনাব মমতাজ উদ্দিন। এর কিছুদিন পর আমি দেশ থেকে চলে আসার পর সেই কমিটি আর আলোর মুখ দেখেছে বলে শুনি নাই।
সুদুর কানাডা থেকে প্রায়ই দৌলতদিয়া পতিতালয় ও ঘাটকে কেন্দ্র করে যে সব অপরাধমুলক কর্মকান্ডের কথা জানতে পারি তা এক কথায় দেশ ও দেশের মানুষের জন্যে সাংঘাতিক রকম খারাপ ও দুর্ভাগ্যজনক। স্হানীয় ও জাতীয় নির্বাচনকে কুলষিত করে ভুয়া, অযোগ্য ও শয়তান লোকগুলোকে নির্বাচনের নামে প্রহসন করে যে তথাকথিত জনপ্রতিনিধি ঘোষণা করা হতো তার পেছনেও ছিল দৌলতদিয়া পতিতালয়ের অবৈধ অর্থের যোগান। এইসব অবৈধ অর্থের যোগান বন্ধ না হলে যত সংস্কারই করা হোক না কেন, আগামী নির্বাচনেও দুর্বৃত্তরাই অর্থের জোরে নির্বাচিত হয়ে আসবে।
অনতিবিলম্বে অপরাধমুলক সমাজকে ধ্বংস করে ন্যায় এ সততার সমাজ গড়ে তুলতে হলে এইসব অপরাধের উৎসস্থল দেশের পতিতালয়গুলো নিয়ে সরকার ও সংশ্লিষ্ট মহলকে নুতন করে ভাবতে হবে।
আব্দুল হালিম মিয়া, স্কারবোরো, কানাডা