বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি

Evolutionary is a Hypothesis: Absurd! Unscientific!

বিবর্তনবাদ হচ্ছে হাইপোথিসিস: অযৌক্তিক! অবৈজ্ঞানিক!

একদা আমিও প্রচন্ড উগ্রবাদী ছিলাম। ‘বিবর্তনবাদ’ শুনলেই মুখ খিঁচিয়ে বলতাম, “ছ্যাঁ! বান্দর থেকে মানুষ আসে কেমনে?!” সায়েন্সের গর্বিত ছাত্র হয়েও চিন্তা করে দেখিনি, ক্লাস এইটেই পড়েছি, জীববিজ্ঞানের মৌলিক একটি শাখা হচ্ছে বিবর্তনবাদ। বানর থেকে মানুষ আসাকে প্রচন্ড অবৈজ্ঞানিক মনে করতাম।

এভাবে যাচ্ছিলো। এভাবেই দিন চলে যেত। কিন্তু গেলনা। হঠাৎ একজন হুজুরের ওয়াজ কানে আঘাত করে উঠলো, নবী দাউদ (আঃ) এর সেই ঘটনা! কথা অমান্য করায় মানুষের বানর হয়ে যাওয়ার ঘটনা। এড়িয়ে যেতে যেতেও শেষে আঁটকে গেলাম! হোয়াট! মানুষ থেকে বানর!! এতদিন বলে এসেছি, বানর থেকে মানুষ জন্ম অবৈজ্ঞানিক! আর এখন, শুনছি মানুষ থেকে বানর হয়ে যাওয়া!! এটা তো অসম্ভব! অযৌক্তিক! অবৈজ্ঞানিক! সাহস করে চিন্তা শুরু করলাম। ভাবলাম, বিজ্ঞানের সাহায্য নেয়া যায়। বিজ্ঞান তো কখনো আমাদের মিথ্যা বলেনি। বিজ্ঞানের তত্ত্ব গুলো আপগ্রেডেড হয়েছে, সংশোধিত হয়েছে।

প্রথমেই যে ধাক্কা খেলাম, তা হচ্ছে, বিবর্তনবাদ! তন্ন তন্ন করে খুঁজে দেখলাম, কোথাও লিখা নেই, বানর থেকে মানুষ এসেছে। অবাক হলাম! এটা তাহলে প্রোপাগান্ডা ছিলো?! নাকি অশিক্ষা! পেয়ে গেলাম মানুষের শ্রেণি বিভাগ! অ্যানিমেলিয়া, কর্ডাটা, ভার্টিব্রাটা……… হোমিনিড, হোমো স্যাপিয়েন্স!
.
বিবর্তনবাদের সবচেয়ে সহজ প্রমাণ পেয়ে গেলাম এই শ্রেণিবিভাগেই! এতদিন ধরে লিখে এসেছি, মানুষের বৈজ্ঞানিক নাম হোমো স্যাপিয়েন্স। কিন্তু এটাই জানতাম না, এই নামের আড়ালে রয়েছে বিবর্তনতত্ত্ব। কারণ, আমি যখন হোমো স্যাপিয়েন্স উচ্চারণ করি, তখন হোমিনিডদের অস্তিত্ব স্বীকার করেই ফেলি! যেটা মানুষ বিবর্তনের কনসেপ্ট। এবার পেলাম, হোমো স্যাপিয়েন্সের আগের প্রজাতিদের। হোমো ইরেকটাস, হোমো হ্যাবিলিস দের! আগে ভাবতাম, বিজ্ঞানীরা আন্দাজে নামকরণ করেছে। এখন দেখলাম, না! সুনির্দিষ্ট ফসিল উপকরণ এবং উপযুক্ত বৈশিষ্ট্য ছাড়া, আলাদা প্রজাতি প্রমাণিত হওয়া ছাড়া বৈজ্ঞানিক নামকরণ করা যায়না। স্যাপিয়েন্স মানে বুদ্ধিমান, ইরেকটাস মানে সোজা দাঁড়ানো, হ্যাবিলিস মানে যারা হাতের কাজ জানে! হোমো তো মানুষেরই গোত্র! তাহলে! এরাও তো মানুষ! কিন্তু এরা কই? উত্তর পেলাম, “সার্ভাইভাল অব দ্য ফিটেস্ট!” এরা টিকে থাকতে পারেনি স্যাপিয়েন্সদের সাথে! এতদিন ধরে বিবর্তনবাদের চাক্ষুস প্রমাণটাকেই অস্বীকার করেছি! এতদিন ভাবেছি, বিবর্তনবাদ হচ্ছে হাইপোথিসিস। কিন্তু আজ এসে জানলাম, একটা হাইপোথিসিস কখনো বিজ্ঞানের মৌলিক ভিত্তি হয়না! বিবর্তনবাদ বর্তমানে জীববিজ্ঞানের মৌলিক শাখা। আর যেহেতু মৌলিক শাখা, এটা ফ্যাক্ট। ফ্যাক্ট কখনো উড়িয়ে দেয়া যায়না। ফ্যাক্ট কে আপগ্রেড করা যায়। অস্বীকার করা যায়না। কোনো জীববিজ্ঞানীই বিবর্তনবাদ অস্বীকার করেন নি। আই রিপিট, ‘জীব বিজ্ঞানী’। কেউ কেউ বড়জোর মিসিং লিংক নিয়ে বা বায়োলজিকাল ট্রি এর কোনো একটা অংশ নিয়ে দ্বিমত করেছেন, কিন্তু পুরো থিওরীটাকে উড়িয়ে দেননি। একমাত্র তখনই পুরো থিওরী উড়িয়ে দেয়া যায়, যখন বিবর্তনবাদের বদলে অন্য একটা বিজ্ঞানসম্মত থিওরী কেউ একজন প্রমাণ করতে পারেন। কিন্তু, ক্রিয়েশনিস্ট থিওরী অর্থাৎ হাজার হাজার বছর আগে আকাশ থেকে আতিক্কা মানুষ নেমে এসে হাঁটা শুরু করছে এমন মতবাদ বিজ্ঞান কখনো স্বীকার করে নিবেনা। এর পিছনে কোনো বিজ্ঞানও নেই। এটা স্রেফ উর্বর মস্তিষ্কের কল্পনা বলা যায়। এর বেশি কিছু না। অন্যদিকে বিবর্তনের চেয়ে অথেনটিক এবং প্রমাণিত থিওরী জীববিজ্ঞানে নেই। বিজ্ঞানীরাও বুঝেছেন, এই থিওরী অস্বীকারের কিছু নেই, বরং সমৃদ্ধ করার আছে। আর যুগ যুগ ধরে বিজ্ঞানীরা এই থিওরীকে সমৃদ্ধ করে যাচ্ছেন। বেচারা ডারউইন এখন বেঁচে থাকলে কতই খুশি হতেন। তাঁর সময়ে জীন ফ্যাক্টরটাও আবিষ্কৃত হয়নি! আর আজ? আজ আমরা জীনতত্ত্ব নিয়ে সাবজেক্টও তৈরী করে ফেলেছি! জিনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং!

আরেকটু এগিয়ে এলাম। এইবার দেখলাম, বিবর্তনবাদ অস্বীকার কারী মানুষ গুলোও বিবর্তনতত্ত্বের কারণেই বেঁচে আছে! কিভাবে?! ঔষুধ শিল্প! ঔষুধ খেয়ে যে রোগ হতে মুক্তি পাচ্ছি সেই সব ঔষুধ প্রথমেই প্রয়োগ করা হয়, মানুষের কাছাকাছি গোত্রের প্রজাতির উপর। যেমন? যেমন শিম্পাঞ্জি, ইঁদুর, গিনিপিগ! শুধু এটুকুই নয়। জীনের মিউটেশান থেকে শুরু করে, ডিএনএ কোডন সব কিছুর সাথেই এই বিবর্তনের গতি প্রকৃতি প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে জড়িত! এখন বুঝতে পারি, সাউথ আফ্রিকার ডু প্লেসিস কেন বাংলাদেশে এসে বলেছিলো, এখানে খুব গরম। অথচ, আমরা দিব্যি এই গরম সহ্য করে আছি। অথচ, ওরা কেন পারছেনা?! এর পিছনেও আছে এই ইভোলিউশান! কারণ, ডু প্লেসিস সাউথ আফ্রিকার ঠান্ডায় অভিযোজিত। সেটা তার সহ্য হয়ে গেছে! আর বাংলাদেশের আবহাওয়া আমাদের সহ্য হয়ে গেছে! তাই এমন হয়! এজন্যই খেলাধূলায় “হোম কন্ডিশান” থাকে। কত্ত সোজা উত্তর!
.
আরো গভীরে গিয়ে পড়লাম। দেখলাম, জীবনের ভিত্তি গুলো। অবাক হলাম যখন জানলাম, পৃথিবীর সব জীবনই নিউক্লিক এসিড ভিত্তিক। এটাই বিবর্তনবাদের সবচেয়ে বড় প্রমাণ! আই রিপিট, সবচেয়ে বড়! পৃথিবীর সকল প্রাণীই একই জীবন ধারার! সবাই আহার করে, শারীরবৃত্তীয় কাজ করে, সবাই প্রজনন করে! এই আশ্চর্য মিলের কারণ কি?! সারা পৃথিবীর এত লক্ষ লক্ষ প্রজাতির মাঝে এই মিলের কি কারণ! এত অসংখ্য প্রজাতির মাঝে কেন এমন একটা প্রজাতিও নেই যে শ্বাস গ্রহণ করেনা? যে আহার করেনা? যে প্রজনন করেনা?! কি কারণ! কারণটাও পেয়ে গেলাম! কারণ পৃথিবীতে একটা প্রাণেরই সৃষ্টি হয়েছে! এবং সেটা নিউক্লিক এসিড ভিত্তিক! আর সেই একটা প্রাণেরই বিবর্তন হয়েছে! একসাথে দুই বা ততোধিক প্রাণ সৃষ্টি হলেও কেবল নিউক্লিক এসিড ভিত্তিক প্রাণ টাই টিকে আছে। বাকি গুলো ধ্বংস হয়ে গেছে। যদি, সেটা না হত, হাতি ঘোড়া বাঘ ভাল্লুক ইত্যাদি ইত্যাদি সবাই আলাদা হত! কেউ হয়তো কিছুই খেতনা! কেউ হয়তো শ্বাস নিতোনা! কেউ হয়তো প্রজনন করতো না! মানে……… মানে প্রাণ জিনিসটাই হতো লক্ষ লক্ষ প্রকারের! কিন্তু কই? এমন তো দেখিনা! তাহলে, তাহলে কিভাবে এই অসম্ভব সম্ভব হল! ইয়েস! গট দ্য আন্সার। বিবর্তনবাদ! ইভোলিউশান! সব প্রজাতিই একটি মাত্র প্রাণ থেকে সৃষ্টি। কেউ টিকে আছে, কেউ টিকে নেই! এলিয়েনদের প্রাণ কেমন হতে পারে? সিলিকন ভিত্তিক? নাকি অন্য কিছু?
.
এবার বুঝলাম, মানুষের বিবর্তন হচ্ছে নাকি হচ্ছেনা! আসলে ঠিকই হচ্ছে। কাজটা লক্ষ লক্ষ বছরের ব্যাপার! আমি বেঁচে থাকবো ৬০/৭০ বছর। কিভাবে দেখে যেতে পারবো! তবে…… তবে প্রমাণ পাই কিছুটা। যখন দেখি কিছু অবিশ্বাস্য মানুষকে। কেউ পানির তলায় বেশি ডুবে থাকতে পারে! কেউ কম অক্সিজেনের দেশ বলিভিয়াতেও বেঁচে আছে দিব্যি! কেউ শরীরকে বাঁকাতে পারে রাবারের মত। ইউটিউবে এমন অনেক দেখেছি। কারণ কি?! কারণ, জীনের মিউটেশান! কিন্তু, এরপরও প্রশ্ন দেখা যায়। অবান্তর প্রশ্ন! কেন আমাদের পাখা গজাচ্ছেনা, কেন আমাদের গায়ের চামড়া শক্ত হচ্ছেনা, গায়ে আঁইশ নেই কেন……… হাহাহাহা। কিভাবে থাকবে! আমাদের উড়ো জাহাজ আছে! গরমে আমরা ফ্যান চালাই, ঠান্ডায় আমরা কম্বল গায়ে দিই! আমাদের জাহাজ আছে, পানিতে ভাসি আমরা। আমরা জুতা পায়ে দিই রাস্তায় হাঁটার সময়! লক্ষ লক্ষ বছর ধরে সামনে এমনই হবে।

বিবর্তনের অন্যতম শর্ত হচ্ছে প্রতিকূল পরিবেশ, আর আমরা? আমরা বিজ্ঞান আর প্রযুক্তির সাহায্যে প্রকৃতি- পরিবেশকে শাসন করতে শিখে গেছি! সবকিছু নিয়ে এসেছি নিজেদের অনুকূলে! আমরা কিছুই সহ্য করিনি! আমরা শাসন করেছি! হোমো স্যাপিয়েন্স বা বুদ্ধিমান মানুষ আমরা। আমরা কেবল শাসন করেছি প্রকৃতিকে! এই উত্তরটাও পেয়ে গেছি।

এমন আরো হাজারো উত্তর পেয়েছি। অনেক কিছু জেনেছি। বিজ্ঞান অবশ্যম্ভাবী, বিজ্ঞানের আশ্রয় আমাদের জন্য আশীর্বাদ। বিজ্ঞান অস্বীকার করা মানুষটিও প্রতিটি সময় বিজ্ঞানের সুফল ভোগ করছে। বিজ্ঞান যদি এক মুহুর্তের জন্য পৃথিবীর উপর থেকে মুখ তুলে নেয়, সেখানেই মানব সভ্যতার কবর হয়ে যাবে। বিজ্ঞান না জেনে, পড়াশোনা না করে কেউ যখন বিজ্ঞানের একটি মৌলিক ভিত্তিকে ভুয়া বলে মতামত দেয়, তখন তাকে মূর্খ বললে মূর্খেরও অপমান। গরু ছাগলও লজ্জা পাবে। কেউ যদি এটা নিয়ে পড়াশোনা করে এর ল্যাকিংস নিয়ে আলোচনা করে সে অবশ্যই বিজ্ঞানের কাছে মোস্ট ওয়েলকাম। এমনকি বিবর্তনবাদের বদলে অন্য একটি প্রাণ বিকাশ মতবাদ যদি আপনি প্রতিষ্ঠিত করেন, আপনি অমর হয়ে যাবেন পৃথিবীর বুকে। কিন্তু কোনো কিছুই না জেনে, অশিক্ষিতের মত ‘ছি ছি’ করে যাওয়া মানুষদের উপর করুণা জন্মায়! কত নিষ্পাপ চড়ুই পাখির ছানার মত মনে হয় তাদের। অতএব, সিদ্ধান্ত নিয়েছি বিজ্ঞানকে জানবো। যতটুকু আমার বা আমাদের সামর্থ্যে থাকে। প্রশ্ন করতে হয়, প্রশ্ন করতে লাগে সাহস। সেই সাহস সবার মনে জন্ম নিক। দ্যাটস অল।

লেখক: সৈকত সাদিক

cnews TODAY

The full form of cnewsTODAY is “Consumer News Today” is meant to be a supplement to the print edition, featuring consumer news, weekly briefs, sustainable campaign, videos, blogs, help to learn, photo galleries and additional content, opinions expressed are those of the writer and do not necessarily reflect the views of the consumers, members or volunteers of the organization “Society for Integrated Voluntary Affairs” registered under the law of “The Societies Registration Act, 1860 – in Bangladesh. It reflects the stories from every corner, NEWS from everywhere, network’s consumers, core mission of providing consumer news coverage and insights into the consumer safety, protection from business, and financial aspects of the world.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button