নির্বাচিত কলাম

In Remembrance Of Journalist Siddique Ahmed: Simple Living And High Thinking

সাংবাদিক সিদ্দিক আহমেদ স্মরণে : সরল জীবনযাপন এবং উচ্চ চিন্তায় বসবাস করতেন। ”সিদ্দিক আহমেদ কে ও কী? এমন প্রশ্ন করার লোকজন কাছে ধারেই পাওয়া যাবে।

আজ (১২ এপ্রিল) সাংবাদিক সিদ্দিক আহমেদের মৃত্যু বার্ষিকী। সরল জীবনযাপন ও উচ্চ চিন্তায় বসবাস করতেন সাংবাদিক সিদ্দিক আহমেদ।

সাংবাদিক সিদ্দিক আহমেদ স্মরণে রাশেদ রউফ লিখছেন,”সিদ্দিক আহমেদ : হাজারও অপ্রাপ্তির ভেতরেও মাথা উঁচু ছিলো যাঁর”

সিদ্দিক আহমেদ ছিলেন এক বহুমাত্রিক মানুষ। সৎ সাংবাদিক হিসেবে, পরিশ্রমী প্রাবন্ধিক হিসেবে, বিশ্বস্ত অনুবাদক হিসেবে এবং নীতিবান শিক্ষক হিসেবে তাঁর পরিচিতি ছিল সর্বব্যাপী। তাঁর কথা বলতে গেলেই আমার মনে পড়ে যায় কবি ও সমালোচক মেথু আর্নল্ড -এর সেই বিখ্যাত পংক্তি :

Sweetness within, Sweetness Without
Perfection Within and Perfection Without.

সিদ্দিক আহমেদ কে নিয়ে লিখতে গিয়ে ড. ময়ুখ চেীধুরী লিখছেন, ”সিদ্দিক আহমেদ কে ও কী? এমন প্রশ্ন করার লোকজন কাছে ধারেই পাওয়া যাবে। তাঁরা দেখেছেন সিদ্দিক আহমেদ সাধারন একজন মানুষ – এমনকি অতি সাধারন একজন মানুষ; পত্রিকায় চাকরী করেন, হাঁটেন, দুরপাল্লায় মিনিবাস কিংবা টেম্পুতে চড়েন। একটু কাছের যাঁরা, তাঁরা জানেন- তিনি প্রচুর সিগারেট টানেন (শুনেছি তিনি এখন সিগারেট পান করেন না), এবং প্রচুর বইও পড়েন। যে কারনে সিগারেট পোড়ান, সে কারনেই পড়েন, সেটা জানবার বিষয় নয়, – বুঝবার বিষয়। অতএব সিদ্দিক আহমেদ কে? – এই প্রশ্নের উপযুক্ত উত্তর হতে পারে-তিনি অমুকের পুত্র কিংবা তমুকের নাতি নন। কেননা, আমাদের সমাজে ও সংস্কৃতিতে Feudal Relation এর দাপট এখনো বিদ্যমান। তাই, সাধারন চোখে তাঁকে সাধারন মানুষ বলেই মনে হতে পারে। এই বিচার একান্তভাবে বহিরাঙ্গিক।

প্রশ্নটা হওয়া উচিত ছিলো- সিদ্দিক আহমেদ কি? এই প্রশ্নের মুখোমুখি দাঁড়াবার লোকজন ধারে কাছে খুব বেশি নেই। প্রচার ধন্য অধিকাংশ লোকের গলায় ঝুলছে অদৃশ্য এক লকেট। তাতে বিক্রয়মুল্য লেখা-কারও বেশি, কারও কম। প্রতিটি ‘আমি’ই যেন বিক্রয়যোগ্য,-বিক্রয়যোগে ‘আমরা’ ভুক্ত হওয়ার জন্য উঠে পড়ে লেগেছে। এই সাধারন ইঁদুর প্রতিযোগিতায় যাঁকে দেখা যায় না, তাঁকে কি করে সাধারন বলি!

‘সেই থেকে অন্য হাটা শুরু। সে নারী আমাকে ভালোবাসে কিনা জানি না। প্রেম দেয় কিনা জানি না। তবে সংসারের দায়িত্ব পালন করে। সংসারের লোক বাড়ানোর তাঁর কর্তৃব্যের অংশটুকু পালন করেছে। সংসার বাড়ে। আমি সংসার গড়ি। সংসার আমার ঘাড়ে চেপে বসে। আমি সংসার থেকে পালাতে চাই। কিন্তু পালিয়ে যাই কোথায়? (পৃষ্টা:৪৮)

সিদ্দিক আহমেদ যখন এমনটি উচ্চারন করেন, তখন বুঝতে অসুবিদে নেই যে, তিনি দৈনন্দিনতাতাড়িত মধ্যশ্রেণির একজন মানুষ। কিন্তু অন্য এক নিবন্ধে তিনি যখন বলেন, ‘যদি, বিউটি ইজ দ্য কনসেন্ট্রেশন অব ইনটালেক্ট হয়, প্রশ্ন থাকে না, কিন্তু যদি বলা হয়, বিউটি ইজ দ্য কনসেষ্ট্রশন কনসাসনেস, তাহলে ইনটিউ্যশান বড় জায়গা দখল করে রাখে। অবয়ব দিয়ে অবয়বহীনকে ধরা যায়- স্পর্ষ করা যায়। কিন্তু অবয়ব কি পারে অবয়বহীনকে আধার দিতে’- তখন অনায়াসে মনে পড়ে নিত্যপুরাতন সেই প্রবচন-“Simple Living and High Thinking’ এর কথা। অতএব, তিনি যে কেবল চিন্তাতাড়িত আটপৌরে মানুষ, তা নয়;-তিনি চিন্তান্বিত আবেগের দোলাও অনুভব করেন। শুধু তাই নয়, শব্দই যে ব্রহ্মান্ডের বৈচিত্রনির্দেশক উপায়,-সেই মৌনীপ্রজ্ঞার যথেষ্ট নিকটবর্তী হয়ে যান। তিনি যখন বলেন,‘ভাবকে, চিন্তাকে, ধ্যানকে প্রকাশের জন্য আলাদা আলাদা মাত্রার শব্দানুসন্ধান করতে হয়। ভাবের সঙ্গে চিন্তার সঙ্গে শব্দের এই সম্পর্কের তারতম্যকে বুঝতে হলে শব্দের ওজনটাক্ওে বুঝতে হবে। আপাতদৃষ্টিতে শব্দের ওজন বায়বীয় একটা কিছু। কিন্তু ওজনের চাপ ধরা গড়ে মস্তিস্কের কোষে, রক্তচাপে। কবিকে এই শব্দের ওজন বুঝতে হয়। শব্দের গভীরতা-উচ্চতা, শব্দের দৈর্ঘ্য-প্রস্থ না বুঝলে কবি সারা জীবন পদ্যই লিখে যাবেন-কবিতা লেখা হবে না’। ‘কবিতার রাজনীতি’(পৃষ্ঠা: ২৮)। এই প্রতিতী সাধারন মানুষের পক্ষে কী করে সম্ভব?

কথায় কথায় অনেক কথা হয়েছে। সিদ্দিক আহেমেদের পাঠবৈদগ্ধ্য প্রতিপাদন কিন্তু এই নিবদ্ধের উদ্দেশ্য ছিল না। আমার উদ্দেশ্য তাঁর একটি মাত্র বাক্য, যা তাঁর আত্ম-চৈতন্যের অনন্য প্রতিধ্বনি। সেই ধ্বনির সন্ধান পেতে হলে, স্থুল অর্থে উপনীত হতে হবে চেরাগী পাহাড়ের চক্রাবর্তে।

সিদ্দিক আহমেদ স্মরণে দৈনিক আজাদীর শিরোনাম: স্মৃতিতে দেদীপ্যমান সিদ্দিক আহমেদ“সিদ্দিক আহমেদ মনে পড়ে সর্বদা”। দৈনিক আজাদী ছিল তাঁর কর্মস্থল। পরিচিতরা সেটা জানেন। কিন্তু তিনি থাকতেন কোথায়-অনেকেই তা জানতেন না। কদম মোবারক থেকে কয়েক কদম দুরে, একটি মেস-জাতীয় হোটেলর ছোট্ট এক কক্ষে তিনি থাকতেন। অফিসকক্ষ থেকে হোটেলের ছোট্ট কক্ষ, – এই ছিল তাঁর আপাত-কক্ষপথ। -এবং এটুকুই হলো তাঁর সাধারন পরিচয়।

তারকাবিহীন হোটেলের স্বল্পালোকিত কক্ষে থাকতেন তিনি, এবং তাঁর ছায়া। লোক-সমাগম বলতে বইপত্রের অনুপস্থিত লেখকবৃন্দ, এবং তাঁর ভাবমুর্তি। বাইরে যাওয়ার সময় কেবল দরজাটা টেনে দিতেন। তালা আছে, কিন্তু চাবি নেই। হয়তো হারিয়ে গেছে (না, হারানোটাই অদ্ভুত) । আরেকটা চাবি বা তালা যোগাড়ের গরজও তাঁর ছিল না। যেন তিনি জাপানের কোনো উপশহরের বাসিন্দা।শুনে, বিস্ময়প্রকাশ না- করে আমি পারিনি। -‘ঘরের জিনিস পত্র যদি চুরি হযে যায়’? –সিদ্দিক আহমেদ নির্লিপ্ত উত্তর দেন, ‘আমি বেরিয়ে যাওয়ার পর, চুরি হওয়ার মতো মুল্যবান কোনো জিনিসপত্র ঘরের ভিতর থাকে না’। এ রকম মুল্যবান উত্তর ময়ুখ চৌধুরীকে খুব কম জনই দিতে পেরেছেন।

‘সাংবাদিক সিদ্দিক আহমেদ ছিলেন আদর্শ মানুষ’ – এটি প্রথম আলোর শিরোনাম। বৈশাখী অনলাইনের শিরোনাম, ”সিদ্দিক আহমেদ: এক বহুমুখী প্রতিভার মহাপ্রয়াণ”


ড. ময়ুখ চৌধুরীর স্মৃতিতে, “একবার, বিমান-বন্দরের ইমিগ্রেশন কাউন্টারে দায়িত্বরত অফিসার অস্কার ওয়াইল্ডকে জিজ্ঞাসা করলেন-‘আপনার সঙ্গে কি আছে? অস্কার ওয়াইল্ডের উত্তর –‘আমার অপরিসীম প্রতিভা’। এই প্রত্যয়দীপ্ত উত্তরের কারনে তাঁর প্রতি আমার ভালোলাগা আরও বেড়ে গিয়েছিল। আত্মমর্যাদার বোধকে অনেকে অহংকার মনে করেন। আমি কিন্তু অহংকারকেও ভালোবাসি (আস্ফালনকে নয়) । যে মরিচে ঝাল নেই, অনেকে তা বোন প্লেটে ফেলে দেয়। যে ছুরির ধার চিক চিক করে না-মরচে আক্রান্ত-সেটা সের-মাপা বিক্রি হয়।

‘লেখা পড়া করে যে, গাড়িঘোড়া চড়ে সে’-বৃটিশ-উপনিবেশ-কালের একটি প্রবচন। সেই প্রবচন ঘোড়া এবং ঘোড়ার ডাকের মতো আজকাল অচল। ‘ফলভারে নত তরু’-সেই রকম নেতিয়ে-পড়া-আরেকটি প্রবাদ। কিন্তু এখনো টিকে আছে-‘অতি ভক্তি চোরের লক্ষন ।’

”জ্ঞানের আলো জ্বালানোর একজন দক্ষ কারিগর ছিলেন সাংবাদিক সিদ্দিক আহমেদ- ড. অনুপম সেন”।

ড. ময়ুখ চৌধুরী বলে যান, “আমি ভক্তি ও বিনয়কে কিঞ্চিত সন্দেহের চোখে দেখি ।–তার কারনও আছে। অভিনয় জিনিসটা সবচেয়ে বেশি মানিয়ে যায় বিনয়ের মধ্যে। সিদ্দিক আহমেদ বিনয়ী নন,-যেহেতু তিনি অভিনেতা নন। তিনি প্রকাশ্য বলেই বিশ্বাসযোগ্য, আর বিশ্বাসযোগ্য বলেই গ্রহনযোগ্য। আমি এই ধরনের অহংকার পছন্দ না করে পারি না। যেহেতু আমি বুঝি. সিংহের গর্জনের উৎস কোথায় । যে সমাজের অধকাংশ মানুষ বিক্রি-হওয়ার জন্য উন্মুখ হয়ে আছে, সেই সমাজে, নি:স্বতার গৌরবে উদ্দীপ্ত একজন মানুষকে সম্মান জানানো দরকার। যাঁর আত্মসম্মানবোধ নেই, তাঁকে সম্মানিত করা যায় না। তবুও আমরা করি। জানি, সম্মানের সম্মান রক্ষা করার জন্য বেশি লোক পাওয়া যাবে না। তাই বলে একেবারে পাওয়া যাবে না, তা তো নয়। ঐ তো লোকটা –পায়ে হেঁটে যাচ্ছেন বলে বেশি দুর যায়নি-আর দেরি করলে তিনি সাধারন মানুষের ভিড়ে মিশে যাবেন।’’

ড. ময়ুখ চেীধুরী
কবি, অধ্যাপক, বাঙলা বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

cnews TODAY

The full form of cnewsTODAY is “Consumer News Today” is meant to be a supplement to the print edition, featuring consumer news, weekly briefs, sustainable campaign, videos, blogs, help to learn, photo galleries and additional content, opinions expressed are those of the writer and do not necessarily reflect the views of the consumers, members or volunteers of the organization “Society for Integrated Voluntary Affairs” registered under the law of “The Societies Registration Act, 1860 – in Bangladesh. It reflects the stories from every corner, NEWS from everywhere, network’s consumers, core mission of providing consumer news coverage and insights into the consumer safety, protection from business, and financial aspects of the world.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button